বেশি ভাগ ক্ষেত্রেই বিবেকানন্দ নিয়ে চর্চার ক্ষেত্রে ভক্তির আতিশয্যে স্বামীজির মতো ব্যক্তিত্বশালী কর্মপুরুষ ধীরে ধীরে অবতারের পর্যায়ে চলে গেছেন এবং দেবত্বে উন্নীত হয়েছেন তাই যখনই তথাকথিত যুক্তিবাদীরা মানুষ বিবেকানন্দর সমালোচনা করেছেন আমরা তার অনুগামীরা দুঃখ পেয়েছি,সংস্কৃত চেতনা বিকাশের স্বার্থেই মানুষ বিবেকানন্দকে খোলা চোখে চেনা জরুরী, মানুষ বিবেকানন্দর মধ্যে মানবিক দোষ ত্রুটি হয়তো কিছু ছিলো কিন্তু তা তার মহান হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বাঁধা নয়|মানবিক এই স্ববিরোধিতা নিয়ে লেখার জন্য আজ তার জন্মদিনকেই বেছে নিলাম|
জীব প্রেম নিয়ে স্বামীজীর অমিয় বাণীটির কথা আমরা সবাই জানি আবার বিবেকানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর পরে ১৮৮৬ সালে প্রথম শ্রীরামৃষ্ণ মঠ ‘বরাহনগর মঠে’র প্রতিষ্ঠার পরে সেখানে মহা উৎসাহে পশুবলি প্রবর্তন করেছিলেন এমনকি অধিকাংশ গুরুভাইদের আপত্তি সত্ত্বেও তিনি সর্বদাই দেবী পূজায় পশুবলির ব্যবস্থা রাখতেন ও পরবর্তীতে বেলুড়মাঠের দুর্গাপূজাতেও তিনি পাঁঠাবলি দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সারদা দেবী আপত্তি করলে তিনি তা করতে পারেননি|এখানে স্ববিরোধিতা বা বিতর্ক আছে, তবে তিনি মনে করতেন মাতৃ শক্তি আরাধনায় তন্ত্র মতের প্রাচীন ধারাকে অনুসরণ করার মধ্যে দোষের কিছু নেই|
‘জাতিভেদ আছে বলেই ত্রিশ কোটি মানুষ এখনো খাবার জন্য এক টুকরো রুটি পাচ্ছে’ এই উক্তি শুনে মনে হয় তিনি জাতি ভেদ মানতেন, তবে তিনিই আবার বলেছেন,জাতি প্রথায় উচ্চতা অর্থ দ্বারা নিরূপিত হয় না’ কিংবা ‘জাতির মধ্যে প্রত্যেকেই সমান’ অর্থাৎ তার জাতিভেদ নিয়ে ভিন্ন মত ছিলো কোনো মানুষকে জাতির ভিত্তিতে নিচু দেখানো বা বঞ্চিত করা তার মতে অনুচিত ছিলো|
নারী জাতির সমস্যা ও তাদের শিক্ষা নিয়ে তিনি সারাজীবন চিন্তা করে গেছেন, আবার তিনি লিখে ছিলেন, ‘বিধবাবিবাহ আন্দোলনে শতকরা সত্তর জন ভারতীয় নারীর কোন স্বার্থই নাই’। আসলে তিনি মনে করতেন ভারতীয় নারীরা শিক্ষিত হলে, ক্ষমতা হাতে পেলে নিজেরাই নিজেদের সমস্যার সমাধান করবে তাদের উপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়|
সন্ন্যাসী হয়েও বিবেকানন্দ কিকরে এতো খেতে ভালোবাসতেন বা ধূমপানেই আসক্তি ছিলো এও বিতর্কর বিষয় বলে অনেকেই মনে করেন|উনি যে আমেরিকায় গিয়ে ১৩ ডলার দিয়ে একটা মীরশ্যাম পাইপ কিনেছিলেন তা একটি চিঠি থেকে জানা যায়|হ্যা বরাবরই ভোজন রসিক ছিলেন তিনি এমনকি দেশ ভ্রমণ কালেও জুনাগড়ে অতিথির বাড়ির রান্না স্বামীজির পছন্দ না হওয়ায় তিনি পাচককে দিয়ে মাছ মাংস সহযোগে নিজের পছন্দমতো রান্না রাঁধিয়ে নিয়েছিলেন। এই ঘটনা মহেন্দ্র দত্তের ‘বিবেকানন্দের জীবনের ঘটনাবলি’ গ্রন্থেই পাওয়া যায়।তিনি মজা করে নিজেকে কচুরি সম্প্রদায়য়ের সন্ন্যাসী বলতেন|আসলে ঠাকুর বলতেন কেঠো সন্ন্যাসী হয়োনা রসে বসে থেকো, সেই কথাই হয়তো অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গেছেন স্বামী বিবেকানন্দ|
অল্প পরিসরে স্বামী বিবেকানন্দর মানবিক দিক লিপিবদ্ধ করা শক্ত কাজ|তবু চেষ্টা করলাম|জানাবেন কিরকম লাগলো|জন্ম তিথিতে শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই স্বামীজিকে|ভালো থাকুন|নমস্কার|