গুরু পূর্ণিমার শুভেচ্ছা

32

জ্যোতিষী শ্রী অনিকেত

আজ ১০ ই জুলাই সারা দেশ জুড়ে গুরু পূর্ণিমা
পালিত হচ্ছে।আমাদের শাস্ত্রে একটি প্রাচীন সংস্কৃত শ্লোক আছে –
গুরুব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণু গুরুর্দেবো মহেশ্বর
গুরুরেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ”
এই শ্লোকের অর্থ- জীবনে গুরুই ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর। তিনিই আমাদের সৃষ্টি, স্থিতি, লয়ের পরম ব্রহ্মজ্ঞান দান করেন। সেই গুরুর উদ্দেশ্যে প্রণাম 
জানাই|

শাস্ত্র মতে এই তিথিতেই আদি গুরু হিসাবে শিষ্যদের মহাজ্ঞান প্রদান করেন স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব।তিনিই আদি গুরু|আবার বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারে বোধিজ্ঞান লাভের পরে এই গুরু পূর্ণিমায় প্রথম তার শিষ্যদের উপদেশ দেন গৌতম বুদ্ধ|অন্যদিকে ব্যাসদেবের জন্মজয়ন্তীও পালন করা হয় এই দিন। সেই কারণে এই বিশেষ দিনটিকে ব্যাস পূর্ণিমাও বলা হয়|

গুরু শিষ্য পরম্পরার কথা উঠলেই আমরা যারা ঠাকুর রামকৃষ্ণর আদর্শে দীক্ষিত তাদের ঠাকুর এবং স্বামীজীর সম্পর্কের কথা মনে আসে।

শুরুর দিকে প্রাথমিকভাবে কিছুতেই শ্রীরামকৃষ্ণের সমস্ত কথায় সায় দিতে পারছিলেন না যুবক নরেন্দ্রনাথ দত্ত। কিন্তু পরমহংসদেবের ব্যক্তিত্বের অমোঘ আকর্ষণ তাকে বার বার টেনে আনছিলো ঠাকুরের কাছে। এমনকি সন্ন্যাস গ্রহণ করার পরেও স্বামী বিবেকানন্দের মন থেকে একটি সন্দেহ দূর হচ্ছিল না তিনি বুঝতে পারছিলেন না শ্রীরামকৃষ্ণ কি সত্যিই অবতার। একদিন রাতে স্বামীজি হঠাৎ চোখের সামনে দেখতে পান পরমহংসদেবের ঘরের সামনে এক অদ্ভূত দৃশ্য। ঘরের একদিকে শ্রীরাম অন্যদিকে শ্রী কৃষ্ণ। সেদিনের পর তার গুরু ভক্তিতে আর কোনো সংশয় ছিলোনা।

প্রকৃত গুরু যেমন শিষ্যর মনের কথা বুঝতে পারেন তেমনই প্রকৃত শিষ্যর কাছে তার গুরুর কথাই বেদ বাক্য।সেখানে কোনো সংশয়ের স্থান নেই।

গুরু শব্দের অর্থ, যিনি শিষ্যদের অন্ধকার বা অজ্ঞতা থেকে আলোর দিশা দেখান সেই ব্যক্তি|গুরু শিক্ষা গুরুও হতে পারেন আবার দীক্ষা গুরুও হতে পারেন এমনকি অভিভাবক ও হতে পারেন। শ্রী রামকৃষ্ণ ছিলেন সর্ব অর্থে গুরু। তাই তাঁর দীক্ষা গুরু তোতাপুরী মহারাজ সদীক্ষা নিতে দ্বিধা বোধ করেন নি।

আজ গুরু পূর্ণিমায় প্রনাম জানাই ঠাকুর, স্বামীজি এবং শ্রী শ্রী মায়ের চরণে। শুভ গুরু পূর্ণিমা।