শুভ রথ যাত্রার শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন

92

জ্যোতিষী শ্রী অনিকেত

জগন্নাথদেব কোনো সাধারণ দেবতা নন। তিনি সাক্ষাৎ ভগবান। তিনি জগতের নাথ। তার মূর্তি তার মন্দির তার লীলা ক্ষেত্র পুরী ধাম ঘিরে আছে অসংখ্য রহস্য। জগন্নাথদেবের রথ যাত্রা নিয়ে
আছে বর্ণময় ইতিহাস এবং পৌরাণিক নানা
ব্যাখ্যা।

প্রতিবছর দেব স্নান পূর্ণিমায় স্নানের পরে আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা পালিত হয়। জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম রথে চড়ে গুণ্ডিচার বাড়ি যান। সেটি জগন্নাথের ‘মাসির বাড়ি’নামে পরিচিত। সাত দিন সেখানে থাকার পর আবার নিজের মন্দিরে ফিরে আসেন। রথে চড়ে এই মাসির বাড়ি যাওয়াকে সোজা রথ মাসির বাড়ি থেকে ফিরে আসা উল্টোরথ নামে প্রচলিত|ওড়িশার প্রাচীন পুঁথি ‘ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ’ বলা হয়েছে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত তার মাধ্যমেই জগন্নাথ মন্দির এ জগতের নাথের প্রতিষ্ঠা ও পুরীর রথ যাত্রার সূচনা হয়েছিল|আজও এই পরম্পরা বজায় আছে|প্রতি বছর নিজের হাতে সোনার ঝাড়ু দিয়ে রথ যাত্রার পথ পরিষ্কার করে রাজা রথযাত্রার উদ্বোধন করেন।

পবিত্র এই রথযাত্রায় তিন বিগ্রহের জন্য তৈরি হয় তিনটি আলাদা রথ। জগন্নাথের রথের নাম নন্দীঘোষ। নন্দীঘোষ-এর উচ্চতা ৪৫ ফুট। এতে থাকে ১৮টি চাকা। পুরো রথটি লাল-হলুদ কাপড়ে মোড়া হয়। বলরামের রথের নাম তালধ্বজ। সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন। রথের দিন প্রতিটি রথকে পঞ্চাশ গজ দড়িতে বেঁধে আলাদা আলাদা ভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় গুণ্ডিচাবাড়ি। 

তিনটি রথে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার দারুব্রহ্ম দিয়ে নির্মিত মূর্তি থাকে।প্রায় ২০৮ কেজি সোনা দিয়ে সেগুলি সাজানো হয়। মনে করা হয় বিশেষ এই দিনে ভগবান মন্দিরের বাইরে আসেন অগণিত ভক্তদের দর্শন ও স্পর্শ করার সৌভাগ্য
প্রদান করতে।

নানা রকম ভাবে এই রথ যাত্রাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা হয়।একটি ব্যাখ্যা অনুসারে এই রথকে তুলনায় করা হয় আমাদের শরীরের সঙ্গে। আর রথে থাকা বিগ্রহকে তুলনা করা হয় পরআত্মার সঙ্গে। রথটি যিনি চালনা করেন সেই সারথীকে তুলনা করা হয়েছে জ্ঞানের সঙ্গে। ওই সারথী ঘোড়ার মাধ্যমে রথটি পরিচালনা করেন। ঘোড়াগুলিকে যেহেতু সারথী পরিচালনা করেন তাই ঘোড়াগুলিকে মন ও ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এর অর্থ জ্ঞান দিয়ে আমরা নিজেদের মন ও ইন্দ্রিয়কে পরিচালনা করতে পারি|

রথযাত্রার দিন বৃষ্টি হয়। এর কোনও অন্যথা হয় না। কয়েক সেকেন্ডের জন্য হলেও প্রতিবছর রথযাত্রার দিন বৃষ্টি হয়|আজও এর ব্যাতিক্রম হয়নি|শাস্ত্রে উল্লেখ আছে রথে আসীন জগন্নাথ দেবের দিব্য দর্শন লাভ করলে আত্মার মুক্তি লাভ হয় এবং পুনর্জন্ম হয়না|যেকোনো শুভ কাজের সূচনার জন্যে রথ যাত্রা ভালো দিন|আপনাদের সবাইকে রথযাত্রার শুভেচ্ছা জানাই|ভালো থাকুন|নমস্কার|

শাস্ত্রে আছে রথে বিরাজমান বামনাকৃতি ভগবান দর্শন করলে আর পুনর্জন্ম হয়না। আত্মার বৈকুণ্ঠ প্রাপ্তি হয়।আপনারও এই সুযোগ হাত ছাড়া করবেন না। সবাইকে রথ যাত্রার অনেক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। জয় জগন্নাথ।