রথ যাত্রার শুভেচ্ছা

152

ওড়িশার প্রাচীন পুঁথি ‘ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ’ এ বলা হয়েছে , এই রথযাত্রার প্রচলন হয়েছিল প্রায় সত্যযুগে। সে সময় ওড়িশা মালবদেশ নামে পরিচিত ছিল। মালবরাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত তার মাধ্যমেই জগন্নাথ মন্দির এ জগতের নাথের প্রতিষ্ঠা ও পুরীর রথ যাত্রার সূচনা হয়েছিল|লোককথা অনুসারে, আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা পালিত জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম রথে চড়ে গুণ্ডিচার বাড়ি যান। সেটি জগন্নাথের ‘মাসির বাড়ি’নামে পরিচিত। সাত দিন সেখানে থাকার পর আবার নিজের মন্দিরে ফিরে আসেন। রথে চড়ে এই মাসির বাড়ি যাওয়াকে সোজা রথ মাসির বাড়ি থেকে ফিরে আসা উল্টোরথ নামে প্রচলিত|

এই রথ নির্মাণের রয়েছে নিজস্ব রীতি|এই তিনটি রথ কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। সেই কাঠ সংগ্রহ করা হয় মাঘ মাসের বসন্ত পঞ্চমী তিথিতে। আর সেই কাঠগুলি নির্দিষ্ট পরিমাণে কাটা শুরু হয় রামনবমী তিথি থেকে। রথের নির্মাণ শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়ার তিথি থেকে। যদিও রথগুলিতে অন্য কোনও ধাতু ব্যবহার করা হয় না। রথের পেরেকও তৈরি হয় কাঠ দিয়ে।কোনওরকম আধুনিক সরঞ্জাম ছাড়াই রথ নির্মাণ করা হয়। রথ নির্মাণের নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য মাপগুলো হাতে নেওয়া হয়। প্রায় ১৪০০ কর্মী রথ নির্মাণ করেন। বংশপরম্পরায় রথ তৈরি করেন কারিগররা। তিনটি রথে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি থাকে ভিতরে। যা নিমকাঠ দিয়ে তৈরি। আর প্রায় ২০৮ কেজি সোনা দিয়ে সেগুলি সাজানো হয়। রথ নির্মাণে যে কাঠ ব্যবহার করা হয়, তার উৎস পুরীর কাছেই দাশপাল্লা ও রানাপুর নামের দুটি জঙ্গল। যে পরিমাণ গাছ কাটা হয়, তার দ্বিগুণ পরিমাণ গাছ প্রতি বছর রোপণও করা হয় জঙ্গলে।

রথযাত্রায় তিন বিগ্রহের জন্য তৈরি হয় তিনটি আলাদা রথ। জগন্নাথের রথের নাম নন্দীঘোষ। নন্দীঘোষ-এর উচ্চতা ৪৫ ফুট। এতে থাকে ১৮টি চাকা। পুরো রথটি লাল-হলুদ কাপড়ে মোড়া হয়। বলরামের রথের নাম তালধ্বজ। সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন। রথের দিন প্রতিটি রথকে পঞ্চাশ গজ দড়িতে বেঁধে আলাদা আলাদা ভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় গুণ্ডিচাবাড়ি। 

রথকে যদি তুলনায় করা হয় আমাদের শরীরের সঙ্গে সেক্ষেত্রে রথে থাকা বিগ্রহকে তুলনা করা যায় পরআত্মার সঙ্গে। রথটি যিনি চালনা করেন সেই সারথীকে তুলনা করা হয়েছে জ্ঞানের সঙ্গে। ওই সারথী ঘোড়ার মাধ্যমে রথটি পরিচালনা করেন। ঘোড়াগুলিকে যেহেতু সারথী পরিচালনা করেন তাই ঘোড়াগুলিকে মন ও ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এর অর্থ জ্ঞান দিয়ে আমরা নিজেদের মন ও ইন্দ্রিয়কে পরিচালনা করতে পারি|

কয়েক সেকেন্ডের জন্য হলেও প্রতিবছর রথযাত্রার দিন বৃষ্টি হয়|আজও এর ব্যাতিক্রম হয়নি|শাস্ত্রে উল্লেখ আছে রথে আসীন জগন্নাথ দেবের দিব্য দর্শন লাভ করলে আত্মার মুক্তি লাভ হয় এবং পুনর্জন্ম হয়না|যেকোনো শুভ কাজের সূচনার জন্যে রথ যাত্রা ভালো দিন|আপনাদের সবাইকে রথযাত্রার শুভেচ্ছা জানাই|ভালো থাকুন|নমস্কার|